ইউরোপীয় বেকারির ইতিহাসে ব্রেড নিয়ে যত কাণ্ডকাহিনী | Le Delicia

ইউরোপীয় বেকারির ইতিহাসে ব্রেড নিয়ে যত কাণ্ডকাহিনী

প্রতিদিনের মত আজও সকালে রুটি মুখে পুরে পেপারে চোখ বুলানো শুরু করি। হঠাৎ চোখ আটকালো “ব্রেডের ইতিহাস ও প্রভাব নিয়ে আস্ত একটা মিউজিয়াম রয়েছে অস্ট্রিয়ায়। অস্ট্রিয়ার লিনৎস শহরের উপকণ্ঠে আস্টেনের ‘পানেউম’ মিউজিয়াম ভবনটিতে প্রায় এক হাজার বর্গমিটারজুড়ে শুধু একটি বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা হল পাউরুটি।’’ এ যেন স্বপ্নের এক বাড়ি, নজর কাড়ার মতো। খবরটা পড়ে এই রুটির ইতিহাস জানার অদম্য কৌতুহল হল। তাই ভাবলাম আজ না হয় আপনাদের সাথে নিয়েই বেকারির বিশাল জগৎ ইউরোপ মহাদেশ থেকে একটু ঘুরে আসি।

মধ্যযুগীয় সময়ে ইউরোপে বেকারী খুবই অপরিহার্য ছিল। বেকিং ওভেন সাধারণত আবাসিক বা অফিস ভবন থেকে আলাদা রাখা হত। কখনও কখনও আগুনের ঝুঁকি কমাতে এগুলো শহরের বাইরে স্থাপন করা হতো। ওভেনগুলি বেশ ব্যয়বহুল ছিল যার জন্য অনেক মূলধন বিনিয়োগ করতে হতো। ইউরোপীয় বেকারির সর্ববৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে ব্রেড। ব্রেড প্রধান খাদ্য হওয়ার কারণে বেকারি পণ্যের উৎপাদন সেখানে ব্যাপক গুরুত্বের সাথে নেয়া  হয়।

ব্রেডের সমৃদ্ধ ইতিহাস কমপক্ষে ৩০,০০০ বছরের পুরনো। ইউরোপের আপার প্যালিওলিথিক সময়ে ময়দার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। প্রায় ১০,০০০ বছর আগে নিওলিথিক যুগে শস্য এবং ব্রেড নিয়মিত খাওয়া হত। ধারনা করা হয়, সেই সময় ব্রেডই প্রধান খাবার ছিল কারণ শিকার সংগ্রহের সময় প্যালিওলিথিক ইউরোপীয় খাবার মূলত প্রাণীপ্রোটিন এবং চর্বির উপর ভিত্তি করে তৈরি হতো। শিকার-সংগ্রহকারী খাদ্য থেকে কৃষি খাদ্যের দিকে নির্ভরতা বাড়ায়, ব্রেড মানুষের খাদ্যতালিকায় আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এই পরিবর্তন মানুষকে যাযাবর থেকে কৃষকে পরিবর্তিত করে। মানুষ শহর গঠনের দিকে পরিচালিত হয় এবং সমাজকে চিরতরে বদলে দেয়। আর ব্রেড সেই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।

ব্রেড বিভিন্ন আকার-আকৃতির আছে। উইলিয়াম রুবেল তার Bread: A Global History’ বইয়ে উল্লেখ করেন যে ইউরোপে গত ২,০০০ বছর ধরে একটি “লোফ-ব্রেড সংস্কৃতি” প্রচলিত ছিল, যখন মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় “ফ্ল্যাট ব্রেড”  জনপ্রিয় ছিল।

মধ্যযুগের শুরুতে মানুষ গম থেকে তৈরি সাদা ব্রেড খেতে পছন্দ করতো। মধ্যযুগীয় চিকিৎসকরাও এই ব্রেড খাওয়া স্বাস্থ্যকর হিসাবে সুপারিশ করতেন- তবে দরিদ্ররা ওটস বা রাই দিয়ে গাঢ় ব্রেড সেঁকে খেতেন। যদি কারো সামর্থ্য না থাকতো তবে তারা ব্রেডের মিশ্রণে চাল, মটর, ডাল, চেস্ট-নাট, অ্যাকর্ন বা অন্যান্য শস্যও যোগ করতো। মধ্যযুগীয় ফ্রান্সে, বেশিরভাগ মানুষ ‘মেসলিন’ নামে পরিচিত এক ধরণের ব্রেড খেতেন, যা গম এবং রাই-এর মিশ্রণ থেকে তৈরি।

মধ্যযুগীয় সময়ে বেকিং বিলাসিতার স্বরুপ ছিল যা গুটিকয়েকজন উপভোগ করতে পারতো। যারা কাঠ পোড়ানো স্টোভ কিনতে পারত এবং গরম করতে পারতো তারা ব্রেড দিয়েই দিন শুরু করত। কারন তখন মনে করা হতো, ব্রেডের গুণমান যত ভাল হবে সামাজিক মর্যাদা তত বৃদ্ধি পাবে।

আজকের মতো মধ্যযুগে তৈরি ব্রেডগুলোও বিভিন্ন আকার এবং আকৃতিতে তৈরি হতো। উদাহরণস্বরূপ, পোলিশ শহর ভ্রোকলাতে মানুষ সাধারণ সাদা ব্রেড, রাই ব্রেড, কালো রাই ব্রেড, গমের রোল, ব্যাগেলস, ক্রিসেন্ট রোল এবং ফ্ল্যাট কেকের মতো ব্রেড খেতো । শুধু খাবারের জন্য ব্রেড ব্যবহার করার পাশাপাশি, মধ্যযুগীয় লোকেরা প্রায়শই এটিকে তাদের প্লেট হিসাবে ব্যবহার করত: ‘ট্রেঞ্চার’ নামে পরিচিত, এ ব্রেডগুলো পুরু সমতল টুকরোতে কাটা হতো। তারপরে মাংস বা পুরু সসের মতো অন্যান্য খাবার ‘ট্রেঞ্চার’ এর উপরে পরিবেশন করতো। খাবার শেষ হয়ে গেলে, ব্রেডটি খেতে পারে, অথবা, ব্যক্তি যদি যথেষ্ট ধনী বা উদার হন তবে দরিদ্র বা অন্যান্য প্রাণীদের খেতে দিতেন। ইউরোপের এক প্রচলিত পৌরানিক কাহিনী আছে এমন:

“মধ্যযুগে রুটি ও সেন্ট এন্থনির ক্রোধ”

মধ্যযুগে রাই এর তৈরি কৃষ্ণবর্ণের ব্রেড খাবার কারণে সমগ্র ইউরোপকে এক ধরণের ভয়াবহ অসুখের মধ্যে পড়তে হয়েছিল, যাকে ধারনা করা হয় ‘সেন্ট এন্থনি’র ক্রোধ হিসেবে। সেইন্ট এন্থনি ছিলেন একজন মিশরীয় সন্ন্যাসী যিনি সর্বদা উপবাস করতেন আর নিজেকে পৃথিবীর সব বিনোদন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতেন। ‘এরগোট’ এর (যা রাই এর সাথে জন্মানো এক জাত এর ছত্রাক) মধ্যে এমন এক ধরণের রাসায়নিকের অস্তিত্ব থাকতো যার ফলে সেটা দিয়ে বানানো ব্রেড খাবার পরে মানুষের মধ্যে পাগলামি, ভুল দেখা, হ্যালুসিনেশান সহ নানা রকমের সমস্যা দেখা দিত। সবাই মনে করত এটা সেন্ট এন্থনির ক্রোধ। তার মধ্যেও এরকম ধরণের বিচ্ছিন্ন চিত্র দেখা আর অজ্ঞান হওয়ার বৈশিষ্ট্য ছিল, এই কারণে এটাকে সেণ্ট এন্থনির রোগ হিসেবেই দেখা হত। আর সেই সময়ে সমগ্র ইউরোপে শুধু সেন্ট এন্থনির “দ্যা অর্ডার অব এন্থনি”ই ছিল একমাত্র চিকিৎসা সংঘ, যারা এই রোগের চিকিৎসা করতে পারতো, এই রোগ যদি অধিক দিন ধরে চলত তাহলে মানুষের আঙ্গুল কালো হয়ে খসে পড়ে যেত। এই কারণে ফ্রান্স থেকে প্রায় ৪০০ কিমি দূরে কলমার শহরে সেন্ট এন্থনির চার্চে দরিদ্র তীর্থযাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকত। তবে তারা এটাই জানত না যে সাদা ব্রেডে এই ফাঙ্গাস জন্মায় না। এটা সেই ধর্ম যাজকরা জানতেন; তাঁরা আক্রান্ত ব্যক্তি কে সাদা গমের ব্রেড খাইয়ে ভালো করে দিতেন। আর পুরো কৃতিত্ব যেত তখন সেন্ট এন্থনির উপর।

ব্রেডের ঝুড়ি!

২০১১ সালের হিসাবমতে, পূর্ব ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র ইউক্রেন পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম খাদ্যশষ্য রপ্তানিকারক দেশ। এজন্য ইউক্রেনকে একসময় সোভিয়েত ইউনিয়েনের ব্রেডের ঝুড়ি বলা হত।

এক বিস্ময়কর জাদুর লাঠি-ব্রেড, ফরাসি বাগেত !  

Baguette

ফরাসি বাগেত

ফরাসিদের পছন্দের দৈনন্দিন তালিকায় আছে ব্রেড। ব্রেডের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে খাটো দণ্ডাকৃতির মতন দেখতে এক ধরনের ব্রেড, নাম ‘বাগেত (Baguette)’। সরাসরি বাংলায় অনুবাদ করলে হবে ‘যষ্টি’ বা ‘দণ্ড’। দণ্ডাকৃতির এই ব্রেড ফরাসি ভোজন সংস্কৃতিতে এমনভাবে মিশে আছে যে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফ্রান্সের অলিখিত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এই বাগেত ফরাসিদের বাজেটের অনেকটাই দখল করে আছে। কীভাবে, কেমন করে এমন জাদুর ব্রেডের লাঠি ফরাসিদের খাবার টেবিলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করল, সে ব্যাপারে একটি শ্রুতি আছে। প্রচলিত যে, সম্রাট নাপোলিয়ন বোনাপার্টের সেনাবাহিনীকে ব্রেড সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ব্রেড প্রস্তুতকারকেরা প্রথম বাগেত তৈরি করেন।

সে যা-ই হোক, গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্যারিস এবং এর আশপাশের বেকারিগুলোতে এ ব্রেড পাওয়া যেতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের ত্রিসীমানা ছাড়িয়ে ফ্রান্স অধিকৃত দেশগুলোতেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। বর্তমানে ফ্রান্স ছাড়াও আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া ও ভিয়েতনামে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বাগেত বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।

মজার ব্যাপার হলো, ফরাসিদের টেক্কা দিয়ে এমন ব্রেডের সমাদরে এগিয়ে আছে আলজেরিয়ানরা। প্রায় সাত কোটি ফরাসি যেখানে দিনে প্রায় তিন কোটি রুটি সাবাড় করে, সেখানে সাড়ে চার কোটি আলজেরিয়ান প্রতিদিন দিন-রাতে দুবেলা খেতে বসে শেষ করে প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ বাগেত। এটা FAO-এর দেওয়া তথ্য। আর FAO কখনোই ফাও কথা বলে না!

জার্মানিকে নাকি বলা হয় পাউরুটির দেশ!

জার্মানিই হয়তো একমাত্র দেশ, যেখানে প্রায় তিনশো রকমের পাউরুটি রয়েছে৷ রয়েছে প্রায় ১,২০০ রকমের মিষ্টি বা নোনতা বিস্কুট৷ জার্মানদের প্রিয় খাবার বিভিন্ন ধরনের পাউরুটি৷ পাউরুটি তৈরির সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয় এতে যেন পুরো খাদ্যগুণ বজায় থাকে৷ এখানে সাদা ব্রেড খুবই কম দেখা যায়৷ সাদা টোস্ট পাউরুটি জার্মানিসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়৷ তবে জার্মানিতে সাদা অর্থাৎ শুধু ময়দায় টোস্ট নয়, এখানে তৈরি করা হয় বিভিন্ন দানাসহ টোস্ট রুটি যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ৷

এত নতুন আর চমকপ্রদ ইতিহাস পড়ে নিশ্চয়ই হাপিয়ে গিয়েছেন? তাহলে একটুকরো ব্রেড খান বরং। হা হা মজা করছি…

ইউরোপের মত বিশাল মহাদেশ ঘুরে শেষ করা আদৌ কি সম্ভব? যাই বলুন না কেন ইতিহাস ঘুরে বেশ ভালই লাগলো এখন ব্রেড খাওয়ার প্রতি আগ্রহ যেন আরও বাড়লো, তাই না?

আহ! ফ্রান্সের বাগেত ব্রেড। ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ হলে খেতে ভুলবেন না কিন্তু। আর আমাদের দেশেই যদি কেউ বাগেত ব্রেড বানায় তাহলে যাচাই করে দেখতে তো হবেই!cheap tom ford forum in the using superior devices, high-quality things. many successful people like to choose to wear who makes the best rickandmortyvape.com. swiss luxury brand include luxury vapespen.fr. exact franckmuller.to also has good workmanship as well as the methods. cheap https://www.replicawatches.nu delivers the heart and soul of the discovery. the oldest watch manufacturer is https://www.tagheuerwatches.to/ reddit. the oldest watch manufacturer is www.phyrevape.com reddit. cheap chia-anime.to replica stella mccartney draws in thousands of online surfers. designated technical conditions to positively subvert the average medical spa remainder relates to the commonalities pertaining to best .

 2358 Views  0 Comments
`
  • No products in the cart.