পবিত্র এই রমজানে সারাদিন রোজা শেষে হরেকরকম খাবার ছাড়া আমাদের বাঙালির কিন্তু ইফতার হয় না। বাঙালির রসনাবিলাসের কারণেই হোক বা পরিবারের সবাই মিলে রোজা পালন উপলক্ষে একটি জম্পেশ ইফতার কিন্তু আমাদের চাইই চাই। ঐতিহ্যগতভাবে আমরা খেজুর, পেয়াজু, ডিম আলুর চপ, বেগুনি, ছোলা মুড়ি সহ আরও নানান খাবার রাখি ইফতার আয়োজনে। সময়ের সাথে এখন আরও বিভিন্ন আইটেম যোগ হয়েছে আমাদের ইফতারে ভিন্ন স্বাদের খোঁজে। তবে স্বাদের পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে স্বাস্থ্যের কথাও। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে পুষ্টিকর খাবারের অভাব হলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন অসুস্থতা। তাই বাঙালির রসনাবিলাস এবং স্বাস্থ্য দুটোই মাথায় রেখে লা ডেলিশিয়া নিয়ে এসেছে ভিন্ন স্বাদের অন্যরকম ইফতার আয়োজন। এই আয়োজনে আপনি পাবেন টার্কিশ ও অ্যারাবিক স্বাদের বিভিন্ন আইটেম এবং দুটি বিশেষ প্যাকেজ।
চলুন দেখে আসি কী আছে এই ভিনদেশী প্যাকেজ গুলোতে
টার্কিশ প্যাকেজঃ এই বিশেষ প্যাকেজে রয়েছে টার্কিশ ক্যুজিনির কিছু জনপ্রিয় খাবার। ইফতারের জন্য বাধ্যতামূলক খেজুর তো থাকছেই সাথে পাচ্ছেন একটি চিগ বোরেক, একটি ডেট মাফিন, ৭৫ গ্রাম তুলুম্বা এবং একটি চিকেন চিজ কাটলেট। এই এতো কিছু পেয়ে যাবেন ভীষণই রিজনেবল প্রাইসে। সাথে রয়েছে ডিসকাউন্টও । চিগ বোরেক, চিকেন চিজ কাটলেট সারাদিনের রোজা শেষে আপনাকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন জোগাবে। খেজুর-স্বাদের ডেট মাফিন আর তুলুম্বা যেমন মিষ্টিমুখ করাবে তেমনই কার্ব ও সুগারের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে দিনশেষে আপনাকে একটি ব্যালেন্সড খাবার উপহার দিবে।
অ্যারাবিক প্যাকেজঃ এই প্যাকেজে আপনি পাচ্ছেন খেজুর, একটি ফাতায়ের, একটি ডেট মাফিন, একটি চিকেন চিজ কাটলেট এবং ৩০ গ্রাম বাসবৌসা। ঝাল ও মিষ্টি স্বাদের সমন্বয়ে এই ইফতার প্যাকেজেও আপনি পাবেন কার্বস, প্রোটিন ও ফ্যাটের পারফেক্ট সমন্বয় যা আপনাকে ব্যালেন্সড ইফতার দিতে সক্ষম। এই প্যাকেজটিও রয়েছে আপনার হাতের নাগালে এবং আছে ডিসকাউন্টও।
আরও বিভিন্ন আইটেম যোগ হয়েছে আমাদের ইফতারে ভিন্ন স্বাদের খোঁজে
সাসলিকঃ মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার এই খাবারটির নাম এসেছে তুর্কি শব্দ shish থেকে যার অর্থ কাঠি বা পিন দিয়ে যুক্ত। গ্রিলড মাংসের কিউব ও বিভিন্ন ভেজিটেবল দিয়ে তৈরি হয় এই সাসলিক (saslic)। এতে ফ্যাটের পরিমাণ যেমন কম তেমনই পুষ্টিকর। সারাদিনের রোজার শেষে এই খাবারটি আপনাকে একইসাথে কার্বস, প্রোটিন ও ফ্যাটের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। একটি সাসলিকে সাধারণত ৪৫৮ ক্যালোরি শক্তি থাকে এবং ২১% কার্ব, ১৬% ফ্যাট ও ৬৩% প্রোটিন থাকে।
ডোনার কাবাব র্যাপঃ এটি একটি অন্যতম জনপ্রিয় তুর্কিশ স্বাদের স্ট্রিট ফুড। পুরো বিশ্বজুড়েই এই খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়। সাধারণত এই কাবাব র্যাপে হুমুস, চিকেন, লেটুস, টমেটো, ক্রিম, ফেটা চিজ, ব্রেড ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। ৩৫০ ক্যালোরির এই খাবারে ১৭% ফ্যাট, ১৫% কার্বস, ৩৪% প্রোটিন এবং ২২% ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান বিদ্যমান। তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি কতটা স্বাস্থ্যকর খাবার এবং দিনশেষে আপনাকে কতটা পুষ্টি দিতে পারে।
চিগ বোরেকঃ চিগ বোরেক (Cig Borek) আরেকটি জনপ্রিয় তুর্কি খাবার যা সাধারণত ঘরে ঘরে তৈরি করা হয়। মাংসের পুর দিয়ে তৈরি ডুবো তেলে ভাজা ক্রিস্পি স্বাদের এই আইটেম আপনাকে দিনশেষে ভাজা খাবারের স্বাদ যেমন দেবে একইসাথে যোগাবে অনেক বেশি পুষ্টি।
তুলুম্বাঃ ইউরোপের বালকান এবং তুরস্ক ও এর আশেপাশের এলাকার একটি জনপ্রিয় ডেজার্ট তুলুম্বা (Tulumba)। কিছু বেসিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয় এই তুলুম্বার ডো। তারপর সেই ডো কে নির্দিষ্ট আকৃতি দিয়ে ভেজে সর্বশেষ সিরাপে ভিজিয়ে পরিবেশন করা হয় এই খাবার টি। এর উপাদান এবং প্রস্তুতি খুব জটিল না হলেও এর স্বাদ কিন্তু অসাধারণ মিষ্টি আর সঠিক স্বাদ আনতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত দক্ষতা। সারাদিনের রোজার শেষে এই মিষ্টিমুখ আপনাকে সমস্ত ক্লান্তি থেকে মুক্তি দিয়ে শরীরে যোগাবে প্রয়োজনীয় সুগার। সাথে মনের খুশি তো ফ্রি আছেই। প্রতি ১০০ গ্রাম তুলুম্বায় আপনি পাবেন ৬০৭ ক্যালোরি। যার ১৭.২৭ গ্রাম ফ্যাট, ৩১.৭৯ গ্রাম সুগার ও কার্বস।
চিকেন চিজ কাটলেটঃ চিকেন চিজ কাটলেট প্রোটিনের এক বিরাট উৎস। চিকেনের ব্রেস্ট দিয়ে তৈরি এই কাটলেটে যেমন প্রোটিনের কোনো ঘাটতি পরবে না তেমনি এর সাথে চিজ মিলে আপনাকে যোগাবে প্রয়োজনীয় ফ্যাট। অনেকেই আছেন সারাদিন রোজা রেখে ইফতারে তেমন কিছুই খেতে পারেন। তাদের জন্য কিন্তু এটি একটি দারুণ আইটেম। কারণ এই আইটেম খেলে অল্প খাবারেও আপনি পেতে পারেন প্রয়োজনীয় পুষ্টি। মাত্র ১০০ গ্রাম চিকেন কাটলেটে রয়েছে ২৯০ ক্যালোরি এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন।
বাসবৌসাঃ এই মিষ্টি প্যাস্ট্রিটি একইসাথে হারিসা, আরিচা, হারিসা হালুয়া, রেভানি, রাবানি, কালব এল লৌজ, চামিয়া, সাফ্রা, নামৌরা সহ রয়েছে আরও অনেক নাম। এই কেকটি মূলত মিডল ইস্ট, নর্থ আমেরিকা, এবং কিছু বালকান দেশ যেমন গ্রিস, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, তুরস্ক ইত্যাদি দেশে ভীষণ বিখ্যাত। তবে এর মূল অটোমান সাম্রাজ্যের সময়কার তুর্কি ক্যুজিনিতে। এই কেকের অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে এটি সিরাপ দিয়ে ভিজিয়ে তারপর পরিবেশন করা হয়। বাসবৌসাতে (Basbousa) রয়েছে ২৬৮ ক্যালোরি যার মধ্যে ৪৬ গ্রাম কার্বস, ৩ গ্রাম প্রোটিন, ৮ গ্রাম ফ্যাট, ৩০ গ্রাম সুগার রয়েছে। রোজায় দিনশেষে মুখ আর মন মিষ্টি করতে এই বাসবৌসা একাই যথেষ্ট। এর নরম তুলতুলে স্বাদে কেবল আপনি না পুরো বিশ্বই পাগল।
ডেটস মাফিনঃ মাফিন পছন্দ না এমন মানুষ কিন্তু খুব কম। আর এই রোজায় ইফতারিতে খেজুর ছাড়া চলে নাকি? খেজুর কেবল রাসূল সা. এর সুন্নতই না একইসাথে ভীষণ পুষ্টিকর খাবারও বটে। তো এবার এই মাফিন আর খেজুর যদি মেলে এক প্যাকেজে এক কামড়ে কেমন হবে ভাবুন তো। এই মাফিনের ভেতরে ব্যবহৃত হয় খেজুর। কখনো শুকনো খেজুর আবার কখনো ফ্রেশ খেজুর কুচি করে যোগ করা হয় মাফিনের ব্যাটারে। এই মাফিন যেমন মিষ্টি তেমনই খেজুরের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এতে রয়েছে ১৭৪.২ ক্যালোরি, ৫.৩ গ্রাম ফ্যাট, ২৯.৫ গ্রাম কার্বস ও ৪.৬ গ্রাম প্রোটিন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটি কতটা লো ফ্যাটের খাবার।
ফাতায়েরঃ ফাতায়েরকে বলা হয় মিডল ইস্টের স্যাভোরি হ্যান্ড পাই। এই পাইয়ে বিভিন্ন ধরনের ফিলিং এবং টপিং দেওয়া হয়। সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে চিজ, মাংস স্পিনাচ ইত্যাদির ফিলিং। অ্যারাবিয়ান ক্যুজিনির অন্যতম এই খাবার তুরস্কেও অনেক জনপ্রিয়। ফাতায়েরের (Fatayer) ডো তৈরি করতে পাফ প্যাস্ট্রি ও শর্টকাট প্যাস্ট্রির ডো, অথবা পিজ্জা ডো ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে ২৯৩ ক্যালোরি যার ৩১% কার্বস, ৫২% ফ্যাট ও ১৬% প্রোটিন।
তাহলে চটজলদি ঠিক করে ফেলুন পরবর্তী ইফতারের জন্য কোন প্যাকেজ অথবা কোন কোন মেনু ঠিক ট্রাই করবেন আর অর্ডার দিয়ে দিন আমাদের এখান থেকে।